শ্রেণিবিন্যাস একটি সুসংবদ্ধ বিজ্ঞান। খুঁটিনাটি অনেক নীতি মেনে শ্রেণিবিন্যাস সম্পন্ন করতে হয়। নিচে প্রধান নীতিগুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেয়া হলো।
১. শ্রেণিবদ্ধগত বৈশিষ্ট্য (Taxonomic character) নির্ধারণ : একটি ট্যাক্সন-সদস্যের যে বৈশিষ্ট্য অন্য ট্যাক্স বন্ধগত একই) থেকে তাকে পৃথক করতে পারে বা পৃথক করার সম্ভাবনা দেখাতে পারে সেটি ঐ ট্যাক্সনের শ্রেণিবন্ধগত বৈশিষ্ট্য। শ্রেণিবিন্যাসের সময় প্রত্যেক ধাপে অন্তর্ভুক্ত ট্যাক্সনের শনাক্তকারী শ্রেণিবদ্ধগত বৈশিষ্ট্যাবলির উল্লেখ করতে হয়।
২. শনাক্তকরণ (Identification) : শ্রেণিবন্ধগত বৈশিষ্ট্যের আলোকে পর্যবেক্ষণে থাকা কোনো ট্যাক্সন-সদস্য পরিচিত বা আগে বর্ণিত হয়েছে এমন হতে পারে, কিংবা অপরিচিতও হতে পারে। তার অর্থ এই নয় যে, এটি একটি নতুন ট্যাক্সন। তাই সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য প্রাণীর সাথে তুলনামূলক বর্ণনার আলোকে নমুনা প্রাণিসমূহকে শনাক্ত করতে হবে।
৩. ক্যাটাগরিকরণ বা ব্যাংকভুক্তি (Categorization or Ranking) : যে সব প্রাণী বা প্রাণিগোষ্ঠীকে
শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশে বিভিন্ন বাপ অর্থাৎ ক্যাটাগরি বা র্যাংক-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে সব প্রাণিগোষ্ঠীকে ট্যাক্সন (taxon: বহুবচনে taxa) বলে। ট্যাক্সন হচ্ছে শ্রেণিবদ্ধগত একক (taxonomic unit)। অর্থাৎ শ্রেণিবিন্যাসে ব্যবহৃত প্রতিটি ক্যাটাগরিভুক্ত (র্যাংকভুক্ত) প্রাণীর জনগোষ্ঠী বা জনগোষ্ঠীবর্গকে একেকটি ট্যাক্সন বলে। যেমন-Animalia, Chordata, Mammalia, Primates, Hominidae, Homo, Homo sapiens একেকটি ট্যাক্সন। বিবর্তনিকভাবে সম্পর্কিত এবং অভিন্ন বৈশিষ্ট্যাবলি বহনকারী প্রাণিগুলো (ট্যাক্সন)-কে একেকটি শ্রেণিবদ্ধগত ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শ্রেণিবিন্যাসের আবশ্যিক (mandatory) ধাপ (র্যাংক বা ক্যাটাগরি) হচ্ছে ৭টি, যথা:- Kingdom, Phylum, Class, Order, Family. Genus ও Species |
৪. নামকরণ (Nomenclature): কোনো বিশেষ প্রাণী বা প্রাণিগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট নামে শনাক্তকরণের পদ্ধতিকে বলা হয় নামকরণ। ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানের পর কোন প্রাণী নতুন প্রমাণিত হলে উক্ত প্রাণীকে ICZN এর নিয়মানুযায়ী নামকরণ করতে হবে। সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস (Carolus Linnaeus) সর্বপ্রথম নামকরণের একটি পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। এটি দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি (Binomial Nomenclature System) নামে পরিচিত। এ নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক জীবের বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকে যার প্রথমটি গণ (genus) নাম এবং দ্বিতীয়টি প্রজাতি (species) নাম। গণ নামের প্রথম অক্ষর ইংরেজী বর্ণমালার বড় অক্ষরে এবং প্রজাতি নামের আদ্যক্ষর ছোট অক্ষরে লিখতে হয়। এভাবে দুটি ল্যাটিন বা রূপান্তরিত ল্যাটিন শব্দ দিয়ে প্রাণীর নামকরণের পদ্ধতিকে দ্বিপদ নামকরণ (binomial nomenclature) বলে। অনেক সময় একটি প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্যঅঙ্গসংস্থানিক পার্থক্য দেখা যায়। (সে সব সদস্যকে ঐ নির্দিষ্ট প্রজাতির উপপ্রজাতি (subspecies) হিসেবে গণ্য করা হয়। তখন গণ ও প্রজাতি সমন্বিত দ্বিপদ নামটি উপপ্রজাতিসহ ত্রিপদ (Irinomial) নামে পরিচিত হয়। এভাবে, উপপ্রজাতিসহ কোনো প্রাণীর নামকরণকে ত্রিপদ নামকরণ (trinominal nomenclature) বলে। যেমন: ইউরোপীয়ান চড়ুই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Passer domesticus; কিন্তু নীলনদ এলাকার চড়ুই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Passer domesticus niloticus পাখি বিজ্ঞানী Schlegel (1844 ) সর্বপ্রথম ত্রিপদ নামকরণ পদ্ধতির প্রচলন করেন এবং এটি ICZN কর্তৃক স্বীকৃত পদ্ধতি।
কোনো জীবের নামকরণ পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এবং তা কতকগুলো নিয়ম অনুসারে সমাধান করা হয়। প্রাণীর নামকরণের নিয়মগুলো প্রাণী নামকরণের আন্তর্জাতিক সংস্থা International Commission on Zoological Nomenclature (সংক্ষেপে ICZN) প্রণয়ন করে থাকে এবং নিয়মগুলো International Code on Zoological Nomenclature-এ লিপিবদ্ধ করা হয়। নিামকরণ সংক্রান্ত নিয়মাবলি নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ানো হয়েছে]
৫. সংরক্ষণ (Preservation) : শ্রেণিবিন্যাসকৃত নমুনাকে বিস্তারিত তথ্যসহ (সংগ্রহকারীর নাম, সংগ্রহের স্থান, সময়, তারিখ ইত্যাদি) সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে অন্যান্য নমুনা শনাক্তকরণ সহায়ক হয় । এ কারণে বিভিন্ন দেশে প্রাপ্ত প্রাণীর নমুনা প্রাকৃতিক জাদুঘর, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের বিভাগীয় সংরক্ষণশালায় সরকারী অনুমোদন সাপেক্ষে সংরক্ষিত থাকে । নমুনাটি হতে পারে স্টাফ করা (stuffed) প্রাণী, চামড়া, কিংবা বিভিন্ন অংশ (শিং, লোম, মল ইত্যাদি) বা কংকাল। প্রাণিদেহ শুকনো বা তরলেও সংরক্ষণ করা যায় । ফরমালিন ও অ্যালকোহল হচ্ছে সংরক্ষণের ভালো তরল
মাধ্যম। বিভিন্ন প্রাণিগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন মাত্রার ফরমালিন ও অ্যালকোহল, কিংবা অন্যান্য বিশেষ সংরক্ষণ মাধ্যম নির্দিষ্ট রয়েছে। অতএব, শ্রেণিবিন্যাসে নমুনা সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল অধ্যায়
আরও দেখুন...